ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার :: নিজের জীবদ্দশায় মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে পারল না বীর মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার দাশ প্রকাশ মাস্টার হুমায়ুন কবির। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে খুবই অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট সহ শারীরিক বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও তার অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ছিল নিত্যসংগী। তাই তাঁর যথাযথ চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হয়। গত কয়েক সপ্তাহে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়সও আশি পার হয়েছে। ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আবেদনও করেন। তিনি একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হলেও মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক তালিকায় তার উঠেনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি তিনি।
তাঁর বড়ো মেয়ে নিগার খানম ঝুমা বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানান তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল বংগবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একটিবারের জন্য দেখা করার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সাক্ষাৎকারের। কিন্তু তার বাবার এই অন্তিম ইচ্ছেটা অপূর্ণই থেকে গেল।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজানের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার দাশ। ১৯৮০ সালে সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর দিলীপ কুমার দাশ থেকে হুমায়ুন কবির নামধারণ করে চলে আসেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে। কারণ তাঁর জমিদার বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র দাশের ভূসম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে হারবাং এলাকায়। জমিদার বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র দাশের ওয়ারিশ সূত্রে তিনি শুধু হারবাং এলাকায় পেয়েছেন ৩০ কানি ভূসম্পত্তি। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে দীলিপ কুমার দাশ (বর্তমান নাম হুমায়ুন কবির) ৩০ কানি জমির মালিক হলেও তাঁর এই সম্পত্তি তিনি ভোগদখল করতে পারেননি। এই সম্পদের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও এই সম্পত্তি এখন তাঁর হাতছাড়া। একারণে তিনি জমিদার হয়েও ৪২ বছর কাটিয়েছেন ভাড়া ঘরে। করছেন অসহায়ত্ব জীবনযাপন।
জীবদ্দশায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির পাঁচ বছর আগে কক্সবাজারে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘আমি ইসলাম গ্রহণ করলেও আমার পরিবার আমাকে সম্পত্তি থেকে মোটেও বঞ্চিত করেনি। আমার পৈতৃক সম্পত্তি বরাবরই আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সম্পত্তি এখন আমার কাছে নেই, আমার সব জমি একটি প্রভাবশালী চক্রের জবর দখলে রয়েছে আমার ৪ কন্যা ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। অর্থের অভাবে আমার সন্তানদের ভালো মতো পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। এর পরও আমার সম্পত্তি উদ্ধারে আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আদালত আমার সম্পত্তি আমাকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেও দখলবাজরা আদালতের আদেশ অমান্য করে আমার সব জমি জবরদখল করে রেখেছে ‘
বীর এই মুক্তিযোদ্ধা ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশ ছাত্র লীগ এবং পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ঠতা। এমনকি
চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনও করে ছিলেন তিনি।
একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাঁকে নিজেরমত করেই ব্যবহার করে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। করেছেন দেশ স্বাধীন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামে বাকশাল গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর কাছে পাঠিয়ে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি। বঙ্গবন্ধুর চিঠি পেয়ে চট্টগ্রামে গঠন করে ছিলেন বাকশাল কমিটি। কিন্তু বাকশাল গঠনের অপরাধে সাতকানিয়ায় হয়ে ছিলেন কমরেড সিরাজ সিকদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার। শুধু তাই নয়, এই বাহিনী দিন দুপুরে গুলি করে হত্যা করেছিল তাঁর ভাই লোহাগড়ার রিলিপ বোর্ড়ের চেয়ারম্যান আশুতোষ কুমার দাশকে। আর ওই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বাদী হয়ে কমরেড বাহিনীর প্রধান সিরাজ সিকদারকে প্রধান আসামি করে সাতকানিয়া থানায় জি আর নং ৩৯৬/৭৫ হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ওই সময় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দীলিপ কুমার দাশ (বর্তমান হুমায়ুন কবির) কে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন লাইসেন্সসহ একটি বন্দুক ও একটি লাল পাসপোর্ট। দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার বিসিক থেকে একটি সুতা ব্যবসার লাইসেন্স।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স-পরিবারে হত্যা করলে, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিনই চট্টগ্রামের মাটিতে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। একারণে ২১ আগস্ট রাতে তাঁকে তৎকালীন আইনশৃংখলা বাহিনী তুলে নিয়ে ৫ দিন বন্দী রেখে নির্যাতন চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁদের বাড়িঘর। এসময় তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে তাঁকে দিতে হয় আর কোনো রাজনীতি না করার মুচলেকা। পরে তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে তিনি চলে যান দেশের বাইরে। দেশে ফিরে তিনি ১৯৮০ সালে সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার দাশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনি নামধারণ করেন হুমায়ুন কবির। চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার উম্মে কুলসুমার সাথে তিনি সংসার পাতেন।
তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন হারবাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ায় ভাড়াঘরে বসবাস করেন।
মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির যুদ্ধ কালীন সময়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রমের গ্রুপের ক্যাপ্টেন শামশু ছিলেন এ অঞ্চলের কমান্ডার। দিনে দুপুরে লামা থানা অপারেশন করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর নাম নেই! তাঁর কাছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ডকুমেন্টপত্র থাকার পরও এখনো পর্যন্ত তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। তিনি একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হলেও মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলেনি।
তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে চার মেয়ে এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে দেয়া হলেও তার একমাত্র ছেলে বেসরকারি একটি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনি করে দিনাতিপাত করছে।
প্রকাশ:
২০২৩-০৬-১৬ ১১:০২:১৩
আপডেট:২০২৩-০৬-১৬ ১১:০২:১৩
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলিতে লেফটেন্যান্ট তানজিম খুন, মায়ের আহাজারী, শোকের মাতম, জানাযা সম্পন্ন
- ডুলহাজারায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ
- চকরিয়ায় নারী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় -জেলা তথ্য অফিসের
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- চকরিয়ায় ইট বোঝাই ডাম্পার ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে ভন্ড বৈদ্যের আবির্ভাব
- বৈষম্য মূলক নিয়োগে ফুঁসে উঠেছে চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি!
- ডুলহাজারায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকরিয়ায় মানববন্ধন
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- কক্সবাজারে যোগ হচ্ছে রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টার :
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
- চাঁদাদাবী, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চেয়ারম্যান ইউনুছসহ ১২জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
পাঠকের মতামত: